শাইখ ‘আব্দুল্লাহ আদ-দুওয়াইশ (রাহিমাহুল্লাহ)’র সংক্ষিপ্ত জীবনী
জন্ম ও পরিচয়:
তিনি হলেন আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ আল-মুহাদ্দিসুল হাফিয ‘আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মদ বিন আহমদ আদ-দুওয়াইশ।
তিনি ১৩৭৩ হিজরী সনে আয-যুলফা শহরে জন্মগ্রহণ করেন।
‘ইলম অর্জন:
তিনি তাঁর বাবার তত্ত্বাবধানে বেড়ে ওঠেন। কারণ তাঁর মা যখন মারা যান, তখন তিনি দুগ্ধপোষ্য শিশু ছিলেন। তিনি ভালোভাবে প্রতিপালিত হন এবং এর মাধ্যমে তিনি প্রশংসনীয় চারিত্রিক গুণাবলী অর্জন করেন। তিনি ছোট বেলাতেই ‘ইলম অর্জন শুরু করেন। তার পাঠ বোঝার এবং মুখস্ত করার শক্তি খুব ভালো ছিল।
তিনি ১৩৯১ হিজরী সনে মদিনার বুরাইদাহয় আগমন করেন এবং শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-মুত্বাওয়্যি‘ (রাহিমাহুল্লাহ) ’র মাসজিদের একটি রুমে অবস্থান নেন। তখন তিনি সালাফে সালেহীনের কিতাবাদির প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়েন এবং তা দ্বারা প্রভাবিত হন। তিনি দুই শাইখুল ইসলাম তথা ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ ও ইমাম মুহাম্মাদ বিন ‘আব্দুল ওয়াহ্হাব (রাহিমাহুমাল্লাহ) দ্বারা অনেক প্রভাবিত হন।
শাইখ (রাহিমাহুল্লাহ) ’র মুখস্থ শক্তি ছিল খুবই প্রখর। তাই তিনি "আল-উম্মাহাতুস সিত্তাহ" বা কুতুবে সিত্তাহ অর্থাৎ সাহীহ বুখারী, সাহীহ মুসলিম, সুনানে আবূ দাউদ, সুনানে তিরমিযী, সুনানে নাসাঈ, সুনানে ইবনু মাজাহ- মুখস্থ করেছিলেন। তাছাড়া তিনি হাদীসের অন্যান্য কিতাব এবং বিভিন্ন বিষয়ে অনেক ‘ইলমী গ্রন্থ মুখস্থ করেছিলেন। শাইখ দুওয়াইশ (রাহিমাহুল্লাহ) একবার শাইখ আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) ’র সাথে এক ‘ইলমী আলোচনার জন্য একত্রিত হন। তখন শাইখ আলবানী শাইখ দুওয়াইশকে বলেছিলেন যে, তিনি অনেক বেশি মুখস্থ করেন।
শিক্ষকবৃন্দ:
শাইখ অনেক বড় বড় ‘আলিমের কাছ থেকে ‘ইলম অর্জন করার সৌভাগ্য লাভ করেছেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন—
(১) শাইখ সালিহ আল-খুরাইসী (রাহিমাহুল্লাহ)
(২) শাইখ সালিহ আল-বালীহী (রাহিমাহুল্লাহ)
(৩) শাইখ মুহাম্মাদ আল-মানসূর (রাহিমাহুল্লাহ)
(৪) শাইখ মুহাম্মাদ আল-‘উলাইত (রাহিমাহুল্লাহ)
(৫) শাইখ ‘আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন হুমাইদ (রাহিমাহুল্লাহ)
(৬) শাইখ ‘আব্দুল্লাহ বিন ‘আব্দুল ‘আযীয আত-তুওয়াইজিরী (রাহিমাহুল্লাহ)
(৭) শাইখ সালিহ বিন ‘আব্দুর রাহমান আস-সুকাইতী (রাহিমাহুল্লাহ)
(৮) শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-মুত্বাওয়্যি‘ (রাহিমাহুল্লাহ)
শাইখের লিখনী:
শাইখের লেখা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল—
(১) আত-তা‘লীক্ব ‘আলা ফাতহিল বারী
(২) মুখতাসার বাদাই‘উল ফাওয়াইদ
(৩) আয-যাওয়াইদ ‘আলা মাসাইলিল জাহিলিয়্যাহ
(৪) তাম্বীহুল ক্বারী ‘আলা তাক্বওয়িইয়াতি মা দ্বা‘আফাহুল আলবানী
(৫) আত-তাওদ্বীহুল মুফীদ লি মাসাইলি কিতাবিত তাওহীদ
(৬) দিফা‘উ আহলিস সুন্নাতি ওয়াল ঈমান ‘আন হাদীসি খালক্বি আদাম ‘আলা সূরাতির রাহমান
(৭) আল-মাওরিদুয যিলাল ফিত তানবীহ ‘আলা আখত্বাইয যিলাল
(৮) আল-কালিমাতুল মুফীদাহ ‘আলা তারীখিল মাদীনাহ
(৯) আল-আলফাযুল মুওয়াদ্বদ্বাহাত লি আখত্বাঈ দালাইলিল খাইরাত
(১০) আত-তাম্বীহাতুন নাক্বিয়্যাহ ‘আলা মা জাআ ফী মু’তামিরিশ শাইখ মুহাম্মাদ বিন ‘আব্দুল ওয়াহহাব
ছাত্রবৃন্দ:
তিনি ২৩ বছর বয়সে দারস দিতে শুরু করেছিলেন। তিনি প্রায় ১৪ বছর দারস দিয়েছিলেন । আর এই সময়ের ভিতরেই তার কাছে অনেক ছাত্র অধ্যয়ন করেছেন। শ্রোতা ছাড়াও তার কাছে ১২০ জনেরও বেশি ছাত্র অধ্যয়ন করেছেন।
তাঁর ব্যাপারে সুযোগ্য ‘আলিমদের প্রশংসা:
ইমাম মুহাম্মাদ সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) সাইয়্যিদ ক্বুত্বুবের অবস্থা সম্পর্কে জানতে শাইখ ‘আব্দুল্লাহ আদ-দুওয়াইশের বই রেকমেন্ড করেছেন। তিনি বলেন—
“সাইয়্যিদ ক্বুত্বুবের বই আমি খুব কম গবেষণা করেছি। আমি ঐ লোকের ব্যাপারে জানি না । কিন্তু ‘উলামায়ে কেরাম তার তাফসীর গ্রন্থটির ব্যাপারে লিখেছেন। যেমন শাইখ আব্দুল্লাহ আদ-দুওয়াইশ (রাহিমাহুল্লাহ) এবং আমাদের ভাই শাইখ রাবী‘ আল-মাদখালী সাইয়্যিদ ক্বুত্বুবের তাফসীর এবং তার অন্যান্য বিষয়ে লিখেছেন। যে চায়, সে ওগুলো দেখে নিতে পারে।”
[ajurry.com & rabee.net]
ইমাম মুক্ববিল বিন হাদী আল ওয়াদি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) সাইয়্যিদ ক্বুত্বুবের ব্যাপারে রচিত শাইখ আব্দুল্লাহ আদ-দুওয়াইশের রদের কথা উল্লেখ করতে যেয়ে বলেন—
“অনুরূপভাবে, আল্লাহ্ আমাদের ভাই, আল-মুহাদ্দিস, আল-হাফিয ‘আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আদ-দুওয়াইশের ওপর রহম করুক। মুখস্তকরণের ক্ষেত্রে আমি আমার এই দুই চোখে তাঁর সমপর্যায়ের কাউকে দেখিনি।” [troid.org]
মৃত্যু:
শাইখ ১৪০৯ হিজরী সনে শাওয়াল মাসের ২৮ তারিখ রবিবার সন্ধ্যায় টানা ১৫ দিনে অসুস্থ থাকার পর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তখন তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৩৭ বছর। আল্লাহ শাইখকে তাঁর খাস রহমত দিয়ে ঢেকে দিক। আমীন।
তথ্যসূত্র:
https://www.albaidha.net/vb/node/14679.
বি.দ্র.: আমাদের নিবন্ধটি উল্লিখিত আর্টিকেল থেকে সংগৃহীত, সংক্ষেপিত এবং ঈষৎ পরিমার্জিত।
অনুবাদক: রাক্বীবুন ‘আতীদ জিহাদ
Collected from:
fb.com/SunniSalafiAthari